অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কারপন্থি মাসুদ পেজেশকিয়ানকে ইরানি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। খবর এএফপির।
খামেনির কার্যালয় থেকে এক বার্তায় বলা হয়, জ্ঞানী, সৎ, জনপ্রিয় এবং বিজ্ঞ পেজেশকিয়ানকে আমি সমর্থন করি এবং আমি তাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করছি। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৫ জুলাই) দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয় শনিবার (৬ জুলাই)।
দ্বিতীয় দফার ভোটে কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলিকে পরাজিত করে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন মাসুদ পেজেশকিয়ান। নব নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট স্বল্পপরিচিত মধ্যপন্থি রাজনীতিবিদ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পেজেশকিয়ানকে ভোট দেওয়া অধিকাংশ মানুষই শহুরে মধ্যবিত্ত এবং তরুণ বলে মনে করা হচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার কারণেই দেশটিতে নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে পেজেশকিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গির বেশ পার্থক্য রয়েছে। দেশটিতে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার কারণে রাষ্ট্রীয় নীতি, পরমাণু কর্মসূচি বা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কে পেজেশকিয়ান কতটা পরিবর্তন আনতে পারবেন সেটা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
মাসুদ পেজেশকিয়ান হৃদরোগ বিষয়ক সার্জন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহর থেকে ইরানের পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তিনি সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইরানের মাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। ৬৯ বছর বয়সী পেজেশকিয়ান ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় তাবরিজ অঞ্চল থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দেশটির ১০ম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
১৯৮০ সালের ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সময় মাসুদ পেজেশকিয়ানকে সম্মুখ সারির চিকিৎসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নির্বাচনের আগে ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থি জোটের সমর্থন পাওয়ার পাশাপাশি সাবেক দুই সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পান তিনি।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নিবন্ধন করলেও পেজেশকিয়ান পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে ১৯৯৪ সালে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি তার স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানকে হারান। পরবর্তীতে তিনি তার কখনো বিয়ে করেননি। বর্তমানে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়েই তার সময় কাটছে।
এবারের নির্বাচনে লড়াই করা ছয় প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র মাসুদ পেজেশকিয়ানকেই কিছুটা উদারমনা ও সংস্কারপন্থি হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তার নির্বাচনী এজেন্ডাগুলোর মধ্যে ইরানের কঠোর হিজাব আইন সংস্কার এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ছিল অন্যতম।
পেজেশকিয়ানের মতে, ইরানকে অবশ্যই বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির কিছু সংস্করণ ফের চালু করার জন্য পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি।
ক্ষমতাগ্রহণের পর এসব বিষয়ে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে পেজেশকিয়ান বিপুল সমর্থন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নিজ দেশের সরকারের কাছেই বাধার মুখে পড়তে পারেন তিনি।
কারণ, ইরানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সিদ্ধান্তই শেষ কথা। তাছাড়া, সরকারের অন্য পদগুলোতে এখনো রক্ষণশীলদের আধিপত্য রয়েছে। ফলে, হিজাব আইন সংস্কার বা পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করতে হলে পেজেশকিয়ানকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তা বলাই বাহুল্য।
Leave a Reply